ধান-নদী-খালের দেশ বরিশাল। সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলিমায় পূর্ণ এর প্রকৃতি। ‘বরিশাল’ একসময়ে ‘বাকেরগঞ্জ’-‘বাকলা’ ও ‘চন্দ্রদ্বীপ’ নামেও পরিচিত ছিল।
নদী ও সাগরে মৎস্য শিকার, মৃৎশিল্প, শোলার সামগ্রী তৈরী, হোগলা ও পাটি বুনন, ছোবরা দ্বারা নানাবিধ উপকরণ তৈরী, কাপড় বয়ন, লোহার সামগ্রী তৈরী, বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী তৈরী, জাল বুনন, বিভিন্ন ধরণের হসত্মশিল্প, বাঁশের সামগ্রী তৈরী ইত্যাদি হচ্ছে এ বিভাগের ব্যবসা বানিজ্য প্রসারে ভূমিকা রাখে। এ বিভাগের ব্যাবসা বানিজ্যের ক্ষেত্রে প্রধান প্রধান ফসল: ধান, ডাল জাতীয় নানা প্রকার শস্য, চিনাবাদাম, নারিকেল, সুপারি, পেয়ারা, আমড়া, মানকচু, তাল, পান ইত্যাদি।
অতীত ব্যবসা-বাণিজ্য
‘ধান-নদী-খাল এই তিনে বরিশাল’ এ শ্লোগানের সাথে এক সময়ের বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ নামে পরিচিত বরিশালের মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। নদী ও খাল-বিলে ভরপুর ছিল বরিশাল বিভাগ। কৃষি ফসলের পাশাপাশি প্রচুর পরিমানে সুপারি ও নারিকেল উৎপাদন হতো। দৌলতখান, আমতলী, পাতারহাট, নলছিটি, নীলগঞ্জ, গালুয়া সহ বেশ কয়েকটি স্থানে গড়ে উঠেছিল সুপারির ব্যবসা কেন্দ্র। এখন আর আগের মতো ফলন নেই। তাই হারিয়ে গেছে ব্যবসা কেন্দ্রগুলো। বর্মি ও চীনারা সুপারি ক্রয়ের জন্য বরিশাল আসতেন। বন্দরে বসবাস করত চীনা ব্যবসায়ীরা। তাদের এখনো কিছু কবর আছে নলছিটিতে। বরিশালের বিভিন্ন বন্দর থেকে সুপারি যেত কলকাতা, চট্টগ্রাম ও রেঙ্গুনে। বার্মার লোকেরা সুপারি জাল (সিদ্ধ করে) দিয়ে এক প্রকার রং তৈরী করত। সুপারির তিনটি প্রকার ছিল টাটি, মগাই ও ভেজা। ভেজা সুপারি শুকানোর পর তাকে মগাই বলা হয়। সুপারির পরপরই স্থান ছিল নারিকেলের। বরিশালের সর্বত্র নারিকেলের ব্যাপক ফলন হতো। ১৮৯৪-৯৫ সালে বরিশাল হতে কলকাতা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ঢাকা ও পাবনা সহ বিভিন্ন স্থানে ৭ লক্ষ নারিকেল পাঠানো হতো। ধান, সুপারি ও পানের পাশাপাশি খেজুর ও আখের চাষ হতো ব্যাপক পরিমানে। আখের রস দিয়ে চিনি তৈরী করা হতো। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বরিশালে চিনি তৈরীর জন্য আখের মাড়াই কল কিনে ব্যবসা খুলেছিলেন। বরিশালের উত্তরে তখন প্রচুর পরিমানে পান উৎপাদন হতো। টরকীর ব্যবসা কেন্দ্র থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় পান চালান করা হতো। ১৮৭৫ সালে হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জে সামান্য পরিমানে তুলা চাষও হয়েছিল। এছাড়াও বরিশালের উর্বর মাটিতে মরিচ, তিঁল, তিশি, সরিষা, মসুরী, কলাই, কচু ও অন্যান্য রবি ফসল উৎপাদন হতো।
বর্তমান ব্যবসা-বাণিজ্য
বরিশালের কয়েকটি খ্যাতনামা শিল্প প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি নিম্নে তুলে ধরা হলো :
প্রতিষ্ঠানের নাম : অপসো ফার্মা
ধরন : বড়
ঠিকানা : বগুড়া রোড, বরিশাল
উৎপাদিত পণ্য : ঔষধ
মালিকানা : ব্যক্তিমালিকানাধীন
প্রতিষ্ঠানের নাম : অপসো স্যালাইন
ধরন : বড়
ঠিকানা : বগুড়া রোড, বরিশাল
উৎপাদিত পণ্য : স্যালাইন
মালিকানা : ব্যক্তিমালিকানাধীন
প্রতিষ্ঠানের নাম : অ্যাংকর সিমেন্ট
ধরন : বড়
ঠিকানা : দপদপিয়া, বরিশাল
উৎপাদিত পণ্য : সিমেন্ট
মালিকানা : ব্যক্তিমালিকানাধীন
এছাড়াও এ বিভাগে রয়েছে
শীতল পাটি শিল্প
আনুমানিক আড়াই থেকে তিনশত বৎসর যাবৎ বংশ পরস্পরায় এটি চলে আসছে। এক সময় ঝালকাঠি শহর এবং ঝালকাঠি জেলাধীন রাজাপুর উপজেলার বিশেষ কয়েকটি এলাকায় এ শিপ্পের প্রসার। শুধু ঝালকাঠিতেই এর সুনাম ছিল না। জীবনানন্দের ঐতিহ্যবাহী রুপসী বাংলায় জন্ম অনেক জ্ঞানী-গুনীর। তাদের স্বপ্নের ঘর সাজানোর প্রধান আসবাব শীতলপাটি। দিনের ক্লান্তি মুছে দেয় একটি সুন্দর পরিপাটি শয়নকক্ষ, আরামদায়ক শষা এনে দেয় সুখ নিন্দ্রা।
গামছা শিল্প
গোটা দেশেই ঝালকাঠি জেলার তাঁত শিল্প বিশেষ করে গামছার সুনাম আছে। ঝালকাঠি শহরের নিকটবর্তী প্রবাহিত বাসন্ডা নদীর পশ্চিম দিকের গ্রামগুলোতেএই গামছা শিল্প অবস্থিত।আনুমানিক দেড় থেকে দুইশত বৎসর ধরে ঝালকাঠি জেলা এবং এ জেলাধীন রাজাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ শিল্পের সুনাম ছিল। গোটা দেশেই ঝালকাঠি জেলার তাঁত শিল্প বিশেষ করে গামছার সুনাম ছিল। সুতা হল এ শিল্পের প্রধান উপকরণ। তাই সুতার মূল্য বৃদ্ধি ও পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় এ শিপ্পের সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলো মূলধনের অভাবে তাদের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সে চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। একসময় ঝালকাঠি শহরের নিকটবর্তী প্রবাহিত বাসন্ডা নদীর পশ্চিম দিকের গ্রামগুলোতে পুরো এলাকা জুড়ে প্রায় ৩৫০/৪০০ তাঁতি পরিবার ছিল। বর্তমানে সামান্য কয়েক ঘর ছাড়া প্রায় সবাই অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছে। প্রায় একই সমস্যা রাজাপুরের আলগী, কৈবর্ত্তখালীসহ আঙ্গারিয়ার তাঁতি পরিবারগুলোর। মাত্র ১০ থেকে ১৫ বছর পূর্বেও এ সব পরিবারের মহিলারা বেলভেটের শাড়ী, হাজার বুটি শাড়ী, ঝাপাশাড়ী এসব শাড়ী ছাড়াও গামছা, লুঙ্গী,মশারী এমনকি চাদরও তৈরি করত।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস