বরিশাল বিভাগের প্রাকৃতিক সম্পদ
প্রকৃতিগতভাবে নদী বিধৌত বরিশালের মাটি অত্যন্ত উর্বর । বাংলার শস্য ভান্ডার হিসেবে বরিশালের খ্যাতি বহু দিনের পুরাতন। তবে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর চাষাবাদের সাথে এ এলাকার জনগণকে সম্পৃক্ত করার ধীর গতির কারণে বর্তমান সময়ে বরিশাল তার শস্য ভান্ডার হিসেবে সর্বোচ্চ স্থানটি হারাতে বসেছিল। বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর কৃষক বান্ধব যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লব রচিত হয়েছে। কৃষি ভর্তুকি, সারের মূল্য হ্রাস, কৃষিক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ কৃষকদের প্রাণে নব আশার সঞ্চার করেছে। এর ফলশ্রুতিতে বরিশাল বিভাগেরও কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লব সূচিত হয়েছে। বরিশালকে আবার শস্য ভান্ডারে পরিণত করার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে এ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তকর্তাগণ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে সর্বোচ্চ চাহিদার সময়ও কখনো সারের সরবরাহে ঘাটতি হয়নি। দেশের অন্যান্য এলাকার মতো বিভিন্ন কৃষি পুর্নবাসন কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষকদের সার, বীজ ও নগদ অর্থের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। রবি মৌসুমে ডিজেল ক্রয়ের জন্যও কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। ২০১০-১১ অর্থ বছরে এ বিভাগের ছয়টি জেলায় মোট উৎপাদিত খাদ্য শস্যের পরিমাণ ১৬.৪২ লক্ষ মেট্রিক টন। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পর উদ্বৃত্ত ৬.৩৬ লক্ষ মেঃ টন খাদ্য শষ্য দেশের অন্যান্য অঞ্চলের খাদ্য চাহিদা পূরণে অবদান রাখছে। বর্তমান সরকারের কৃষি বান্ধব নীতিমালার কারণে অচিরেই বরিশাল আবার বাংলার শস্য ভান্ডারে পরিণত হবে বলে আশা করা যায়।
বরিশাল বিভাগে খাদ্যশস্যের উৎপাদন, চাহিদা ও উদ্বৃত্ত
২০০৭-০৮ অর্থ বছরে উৎপাদন ১৯,৯৫,৫৮৪ মেঃটন, চাহিদা ১৬,৩০,৭১৬ মেঃটন এবং উদ্বৃত্ত ৩,৬৪,৮৬৮ মেঃটন
২০০৮-০৯ অর্থ বছরে উৎপাদন ২০,৬৫,২৬৭ মেঃটন, চাহিদা ১৬,৫৫,৬০১ মেঃটন এবং উদ্বৃত্ত ৪,০৯,৬৬৬ মেঃটন
২০০৯-১০ অর্থ বছরে উৎপাদন ২০,৩৪,১০৪ মেঃটন, চাহিদা ১৬,৮০,৪৮৬ মেঃটন এবং উদ্বৃত্ত ৩,৫৩,৬১৮ মেঃটন
২০১০-১১ অর্থ বছরে উৎপাদন ২৫,৭৬,৮২৮ মেঃটন, চাহিদা ১৯,৪০,৮৪৮ মেঃটন এবং উদ্বৃত্ত ৬,৩৫,৯৮০ মেঃটন
· বর্তমান সরকার কর্তৃক বৃহত্তর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণে গৃহীত সামাজিক নিরাপত্তা মূলক বিভিন্ন কার্যক্রম এ বিভাগে সাফল্যজনকভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি এ বিভাগে সফলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রেশন ব্যবস্থা প্রবর্তন বর্তমান সরকারের একটি ব্যতিক্রম ধর্মী পদক্ষেপ হিসেবে জনগণের কাছে প্রশংসিত হচ্ছে। অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর আওতায় এ বিভাগে ৫৫,৫৩৩ জন উপকারভোগীর জন্য ৩১,৯১,৭১,০০০/- টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
· ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ইলিশের প্রজননকালে মৎস্য আহরণ বন্ধকালীন সময় এ বিভাগের ১০৫৮৬২টি জেলে পরিবারকে পরিবার প্রতি মাসিক ৩০ কেজি চাল দেয়া হচ্ছে। মৎস্য আহরণ বন্ধকালীন সময়ে বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য এই বিভাগের ভোলা ও পটুয়াখালী জেলায় ২০১০-২০১১ অর্থ বছরে মোট ৪২৬৫ জন জেলেকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। পটুয়াখালী ও ভোলা জেলায় বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য বরাদ্দকৃত ৩২১.২০ লক্ষ টাকা দিয়ে প্রশিক্ষিত ৪২৬৫ জন জেলেদের মধ্যে রিক্সা, ভ্যান,সেলাই মেশিন, জাল ও চাল বিতরণ করা হয়েছে। এই উদ্যোগের ফলে জেলে পরিবারের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটা ছাড়াও মৎস্যজীবীগণ মৎস্য আহরণ বন্ধকালীন সময়ে নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকছেন। ফলে ২০১০-২০১১ অর্থ বছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে ৩,৪১,০০০ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। এসব কর্মসূচী এ বছরেও চলমান রয়েছে। এ বছরেও ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস